বিশেষ প্রতিনিধি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত কিছু প্রতিষ্ঠানের শিকলে বন্দী। সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ঔষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল), স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং অডিট বিভাগ। এই প্রাতিষ্ঠানিক শিকল থেকে স্বাস্থ্য খাত মুক্ত না হলে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি সম্ভব নয়।আজ শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে দেশে মানসম্মত ও ব্যয়সাধ্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (ইউএইচসি) অর্জন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ‘ইউএইচসি ফোরাম’ আত্মপ্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপটির আয়োজন করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।
সংলাপে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক লিয়াকত আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক প্রমুখ। এতে বক্তারা স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য, কর্মসূচি ও প্রাতিষ্ঠানিক কৌশল তুলে ধরেন।ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের খরচ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিকলে বন্দী। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সরকারের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। এখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওষুধ কিনতে হয় সরকারকে। এরপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং অডিট বিভাগ। এই প্রাতিষ্ঠানিক শিকল থেকে স্বাস্থ্যখাতকে মুক্ত না করতে পারলে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করা সম্ভব নয়।তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম রয়েছে- এটি কোনোভাবেই স্বাস্থ্যখাতের কেনাকাটার জন্য নয়। অন্য কোনো খাতের জন্য হলে ঠিক আছে। এখানে ব্যবস্থাপকদের হাত-পা বেঁধে দৌড়াতে বলা হয়।
জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে অনেক জনবলের অভাব রয়েছে। যতটুকু রয়েছে, তাদের দক্ষতার প্রচুর অভাব রয়েছে। সম্মিলিত জনশক্তি পরিকল্পনা করতে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের আলাদা কোনো কর্মসূচি নেই। কোনো ধাপে কি ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে এটার আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। সার্বিকভাবে এটির উন্নতি জরুরি। এছাড়া শুধু রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। এজন্য কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করতে হবে।সংলাপে পিপিআরসি চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান তিনটি অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। প্রথমত, ইউএইচসি অর্জনে বাস্তব অগ্রগতি পর্যালোচনা। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সংস্কার কর্মসূচিতে গতি ও বেগ আনার জন্য রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তাদীপ্ত কৌশল প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে ফলপ্রসূ মত বিনিময়। তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যসম্মত জীবন প্রণালী ও স্বাস্থ্য স্বাক্ষরতা বিস্তারে সর্বস্তরের জনসাধারণ, বিশেষ করে তৃণমূল মফস্বল, স্কুল পর্যায়ে কার্যকর সামাজিক আন্দোলন। আসন্ন রমজানের আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে মত বিনিময়ের জোরালো প্রচেষ্টা করা হবে।